বর্তমান সময়ে দেশে স্থুল শিশুদের লিভারের সমস্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। স্থুলতার কারণে কি শিশুদের শরীরে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে? উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অল্প বয়সে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তে কোলেস্টেরলের মতো গুরুতরভাবে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
সাধারণত, আমরা খাবারে যে পরিমাণ চর্বি গ্রহণ করি তা লিভারে বিপাকিত হয়। খাবারে অতিরিক্ত ক্যালরির অভাব এবং পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম থাকলে এই অতিরিক্ত কোলেস্টেরল শিশুর লিভারে জমতে থাকে।
অত্যধিক ক্ষতিকারক LDL কোলেস্টেরল লিভারের মধ্যে জমে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) তৈরি করে।
যখন সমস্যাটি গুরুতর হয়, তখন এটি লিভারের প্রদাহ কোষের ক্ষতির কারণ হয়, যার ফলে আরও গুরুতর রোগ NASH হয়, যা লিভারের সিরোসিসে এগিয়ে যেতে পারে, যার চূড়ান্ত পরিণতি হল অকাল মৃত্যু।
শিশু স্থুল কি না কিভাবে বুঝবেন ?
শিশুদের নিয়মিত ওজন ও উচ্চতা পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করে। যদি শিশুটিকে খুব চর্ম আছে বলে মনে হয়, তাহলে আপনার সন্তানের ওজন বেশি বা স্থূল কিনা তা সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে তার ওজন এবং উচ্চতা পরিমাপ করে বডি মাস ইনডেক্স (BMI) নির্ধারণ করা যেতে পারে।
স্থুল রোগের লক্ষণ কী?
প্রাথমিক পর্যায়ে স্থূলতা ছাড়া কোনো প্রকার বাহ্যিক লক্ষণ নেই। তবে সমস্যা বেশি হলে লিভারে রোগের বিভিন্ন উপসর্গ যেমন বমি বমি ভাব, ক্ষুধামন্দা, দুর্বলতা, চোখ ও শরীর হলুদ হয়ে যাওয়া, পেট বড় হওয়া, পেটে ব্যথা, হাত-পা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
রোগ নির্ণয়ের উপায়
রক্তের লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কোলেস্টেরলের সঠিক মাত্রা জানা যায়। স্থুল শিশুদের মধ্যে, লিভারে কোলেস্টেরল জমা হয়েছে কি না জানার জন্য প্রাথমিকভাবে SGPT পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া লিভারের আল্ট্রাসনোগ্রাম করে সমস্যার গভীরতা নির্ণয় করা যায়। প্রয়োজনে পরবর্তী তারিখে একটি স্ক্যান বা বায়োপসি প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ
স্থুলতায় শিশুদের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমাতে অ্যান্টিলিপিড ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। যাইহোক, ১০ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য এই ওষুধের ব্যবহার এখনও সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত নয়। মনে রাখতে হবে লিভারে কোলেস্টেরল জমা হওয়ার কারণে ফ্যাটি লিভার রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তাই প্রতিরোধই একমাত্র উপায়। তবে প্রথম পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ে
শুধুমাত্র ওজন কমানোর মাধ্যমেই অনেকাংশে নিরাময় করা যায়।
অন্যদিকে, এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ওষুধ (ভিটামিন-ই) এর সাথে সাথে সম্পর্কিত সমস্যা যেমন, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস দিয়ে চিকিত্সা করা হয়। তাই রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি ও এর জটিলতা রোধে পরিবারকে উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে, শিশুদের খেলাধুলা ও শারীরিক পরিশ্রম নিশ্চিত করতে হবে এবং শিশুরা যাতে স্থূল হয়ে না পড়ে সেজন্য সামাজিকভাবে সজাগ হওয়ার জন্য গড়ে তুলতে হবে।
0 Comments
Do not share any link